সহীহ নামাযে নাবাওয়ীঃ তাকবীরে তাহরিমা থেকে সালাম পর্যন্ত – পর্ব ১
মূলঃ যুবায়ের আলী যাঈ
অনুবাদঃ আবু হিশাম মুহাম্মাদ ফুয়াদ
পূর্ব সতর্কীকরণঃ আরবি দু’আ বা যেকোনো পাঠের বাংলা উচ্চারণ কখনোই উচ্চারণের সঠিকত্বের ক্ষেত্রে তার সমকক্ষ হবার যোগ্যতা রাখে না। এখানে দেয়া হয়েছে শুধু বিশেষ অপারগতার শেষ সম্বল হিসেবে।
“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন তুমি নামাজের জন্য দাঁড়াবে তখন তুমি তাক্ববীর বলবে।” [2]
“লোকদের (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর পক্ষ থেকে আদেশ করা হত যে নামাযে প্রত্যেক ডান হাত বাম হাতের যিরা এর উপরে রাখবে। ” [7]যিরা’:
মধ্যমা আঙুলের অগ্রভাগ থেকে শুরু করে কনুই পর্যন্ত। (ক্বমুসুল ওয়াহিদ পৃঃ ৫৬৮)
“সাইয়্যেদুনা ওয়াঈল বিন হুযর রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘অতঃপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের ডান হাত নিজের বাম হাতের কব্জির উপর, জোড়ার উপর ও সা’ইদ এর উপর রাখলেন।’” [8]সা’ইদঃ কণুই থেকে কব্জির জোড়া পর্যন্ত অংশ। (ক্বমুসুল ওয়াহিদ পৃ ৭৬৯)
যদি হাত পুরো যিরা’ (কব্জি, জোড়া ও কব্জি থেকে কনুই পর্যন্ত অংশ) এর উপর রাখা হয় তবে আপনা আপনিই হাত নাভির উপর ও বুকে চলে আসে।৫. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাক্ববীরে তাহরিমা ও ক্বিরাআতের মাঝখানে চুপে চুপে দু’আ পাঠ করতেনঃاللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، اللَّهُمَّ نَقِّنِي مِنْ خَطَايَايَ كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ، اللَّهُمَّ اغْسِلْني مِنْ خَطَايَايَ، بِالثَّلْجِ وَالْماءِ وَالْبَرَد
আল্লা-হুম্মা বা-‘ইদ বাইনী ওয়া বাইনা খাত্বা-ইয়া-ইয়া কামা বা-‘আদতা বাইনাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিব। আল্লা-হুম্মা নাক্বক্বিনী মিন খাত্বা-ইয়া-ইয়া কামা ইয়ুনাক্কাস্ ছাওবুল আবইয়াদু মিনাদ দানাসি। আল্লা-হুম্মাগসিলনী মিন খাত্বা-ইয়া-ইয়া বিস্সালজি ওয়াল মা-’ই ওয়াল বারাদ। [9]
এছাড়াও কিছু দু’আ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থকে প্রমাণিতঃ سُبْحانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، وَتَبارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلاَ إِلَهَ غَيْرُك
সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়াতাবারা কাসমুকা ওয়াতায়ালা যাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গইরুকা। [10]
প্রমাণিত দু’আ গুলো থেকে যেকোনো একটা পড়ে নিলেই হয়ে যাবে।
৬. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পড়তেন-
اَعُوْذُ بِاللّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
আ’ঊযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রযীম। [11]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত আরেক দু’আঃ
اَعُوْذُ بِاللّهِ السَّمِيْعِ الْعَلِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ مِنْ هَمْزِهِ وَ نَفْخِهِ وَ نَفْثِهِ
আ’উযুবিল্লাহিস সামী’ঈল ‘আলীমি মিনাশ শায়ত্বনির রাযীমি মিন হামযিহি ওয়া নাফখিহি ওয়া নাফসিহি। [12]
৭. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ
(বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম) পড়তেন। [13]
জোরে বা চুপে চুপে উভয় ভাবেই তা পড়া সঠিক । বেশিরভাগ দলিলের পরিপ্রেক্ষিতে আম ভাবে চুপে চুপে পড়া ভালো।[14]
এ মাসআলা–য় কঠোরতা প্রয়োগ করা ভালো নয়।
পাদটীকা
1। ইবনে মাজাহ ৮০৩; সানাদ সহীহ; সহীহ বলেছেন- তিরমিযীঃ ২০৪; ও ইবনে হিব্বান; আল ইহসানঃ ৮৬২ ও ইবনে খুযাইমাহঃ ৫৮৭। (এই রেওয়াইয়াত) এর রাওয়ী আব্দুল হামীদ বিন জা’ফার মুহাদ্দিসদের নিকটে সিক্বাহ ও সহীহুল হাদীস। দেখুন নূরুল আইনাঈন ফি মাস ‘আলাতি রফ’উল ইয়াদাইন ; পৃঃ ৯৮-৯৯, দ্বিতীয় ত্ববা’আ। এর উপর জারাহ প্রত্যাখ্যাত। মুহাম্মাদ বিন ‘আমর বিন ‘আতা সিক্বাহ (তাক্বরীবুত তাহযিব ৬১৮৭)। মুহাম্মাদ বিন ‘আমর বিন ‘আত্বা এর আবু হুমাইদ আস সা’আদি ও সাহাবায়ে কেরাম(রাযিয়াল্লাহু আনহুম) আজমাঈন এর মজলিসে শামিল হওয়া প্রমাণিত। দেখুনঃ সহীহ বুখারি ৮২৮। অতএব এই রেওয়াইয়াত মুত্তাসিল।
2। বুখারিঃ ৭৫৭; মুসলিমঃ ৩৯৭
3। বুখারিঃ৭৩৬; মুসলিমঃ৩৯০
4। মুসলিমঃ ৩৯১
5। আবু দাউদ ৭৫৩; সানাদ সহীহ। সহীহ বলেছেন ইবনে খুযাইমাহ: ৪৫৯ ও ইবনে হিব্বানঃ আল ইহসান ৭৭৪ ও হাকিম ১/২৩৪, যাহাবী তার সাথে সহমত পোষণ করেছেন।
6। মুসনাদে আহমাদ ৫/২২৬; হা/ ২২৩১৩; সানাদ হাসান ও তার থেকে ইবনে যাওজী তার তাহক্বীকেঃ ১/২৮৩ হা/৪৭৭, দ্বিতীয় নুসখাহ ১/৩৩৮; হা/৪৩৪
7।বুখারিঃ ৭৪০; মুয়াত্তা ইমাম মালেক ১/১৫৯; হা/৩৭৭
8। আবু দাউদঃ ৭২৭, সানাদ সহীহ; নাসাঈঃ ৮৯০, সহীহ বলেছেন ইবনে খুযায়মাহঃ ৪৮০ ও ইবনে হিব্বানঃ ১৮৫৭। জ্ঞাতব্যঃ পুরুষদের নাভির নিচে ও শুধু মহিলাদের বুকে হাত বাঁধার বিষয়টি কোনো সহীহ হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত নয়।
9। বুখারিঃ ৭৪৪; সানাদ সহীহ; নাসাঈঃ৮৯০
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমার এবং আমার গুনাহসমূহের মধ্যে এমন দূরত্ব সৃষ্টি করুন যেরূপ দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আমার গুনাহসমূহ থেকে এমন পরিষ্কার করে দিন, যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আমার পাপসমূহ থেকে বরফ, পানি ও মেঘের শিলাখণ্ড দ্বারা ধৌত করে দিন।
10। আবু দাউদঃ ৭৭৫; সানাদ হাসান। নাসাঈঃ ৯০০,৯০১। ইবনে মাজাহঃ ৮০৪। তিরমিযীঃ২৪২, তিনি এমন কারণে একে ত্রুটিযুক্ত বলেছেন যা মূলত ত্রুটি নয়। হাকেম সহীহ বলেছেন (১/২৩৫)- যাহাবী সহমত পোষণ করেছেন ।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনার প্রশংসাসহ আপনার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি, আপনার নাম বড়ই বরকতময়, আপনার প্রতিপত্তি অতি উচ্চ। আর আপনি ব্যতীত অন্য কোনো হক্ব ইলাহ্ নেই।
11।মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ২/৮৫ হা/২৫৮৯; সানাদ হাসান
12।আবু দাউদ ৭৭৫; সানাদ হাসান। দেখুন ফাক্বরুহুঃ৫, হাশিয়াঃ ২
13।নাসাঈঃ ৯০৬, সানাদ সহীহ। সহীহ বলেছেন ইবনে খুযাইমাহঃ ৪৯৯, ইবনে হিব্বানঃ আল ইহসান ১৭৯৪ , হাকিম শাইখাইনের শর্তে (১/২৩২)- যাহাবি সহমত পোষণ করেছেন
জ্ঞাতব্যঃ এই রেওয়াইয়াতের রাবী সাঈদ বিন আবি হিলাল এই হাদীস ইখতিলাত এর পূর্বে বর্ণনা করেছেন। খালিদ বিন ইয়াযিদ এর সাঈদ বিন আবি হিলাল থেকে রেওয়াইয়াত সহীহ বুখারি (১৩৬) ও মুসলিম (১৯৭৭) এ রয়েছে।
14।জোরে পড়ার পক্ষে – দেখুন আন নাসাঈ ৯০৬;সানাদ সহীহ। চুপে চুপে পড়ার পক্ষে- দেখুন সহীহ ইবনে খুযাইমাহ ৪৯৫; সানাদ হাসান। সহীহ ইবনে হিব্বান, আল ইহসানঃ ৫৯৬; সানাদ সহীহ
মূলঃ সাহীহ নামাযে নাবাওয়ী; হাদইয়াতুল মুসলিমিন নামায কি এহেম মাসাইয়েল মা’আ মুকাম্মাল নামাযে নাবাওয়ী, যুবাঈর আলি যাঈ,পৃষ্ঠা ১০৪-১০৬, www.kitabosunnat.com